শুভদা - বই ও সিনেমা


 

'শুভদা' অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস।এটি তিনি বাল্যকালে রচনা করেছিলেন।কিন্তু উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে। কারণ 'শুভদা' উপন্যাসের প্রভাব তার প্রথম বয়সের লেখা 'অন্নপূর্ণার মন্দির' এর উপর পরে।'অন্নপূর্ণার মন্দির ' প্রকাশিত হলে শরৎচন্দ্র পড়ে দেখেন যে 'শুভদা' উপন্যাসের প্রভাব এতে যথেষ্ট রয়েছে।তাই এটা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।

 


#কাহিনী_সংক্ষেপ

 সহজ সরল কোমল একটা চরিত্র শুভদা।গ্রামে এমন কেউ নেই যে তাকে পছন্দ করে না। সংসারে রয়েছে অত্যাচারী স্বামী হারাণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ,দুই কন্যা সন্তান ললনা ও ছলনা এক পুত্র সন্তান মাধন ও বড় ননদিনী রাসমণি।

কষ্টের সংসার শুভদার।কখনো ভালো যেত কিন্তু অধিকাংশ সময়টা কষ্টের মধ্যেই যেত।

হারাণ মানুষটা মোটেও সুবিধার নয়।মানসিক অশান্তিতে রেখেছে পুরো পরিবারকে।নেশা করার অভ্যেসতো রয়েছেই সাথে আরো কিছু বদ অভ্যাস ছিল।দুদিন,তিনদিন কখনো বা পাঁচ/ছয়দিনও তিনি বাড়ি ফিরতেন না।তখন উপবাস করেই কাটাতে হয় সবাইকে।এমনি করে কী আর দিন চলে!তবুও ললনা ও শুভদা মিলে প্রাণপণে চেষ্টা করে সবার মুখে দু চারটা ডালভাত জুগিয়ে দেবার।ললনা শুভদার বড় মেয়ে।বাল্যকালে বিয়ে হয়েছিল।বিয়ের এক বৎসরের মধ্যে বিধবা হয়েছে সে।সেই থেকে বাবার বাসায় আছে। একেতো সংসার টানাপোড়নের মধ্যে চলছে অন্যদিকে মাধব প্রায় বছর ানেক ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।সবার ছোট মাধব।নিয়মিত চিকিৎসায় হয়তবা সুস্থতা ফিরে আসতো কিন্তু সে সামর্থ্য শুভদার নেই।

ছলনা শুভদার ছোট মেয়ে ঠিক ললনার বিপরীত।ললনা দু,চারটার বেশি কথা বলে না।আর ছলনার মুখের কথার শেষ নেই।কিছুটা আহ্লাদী স্বভাবের।দেখতে দুজনই রূপসী কিন্তু কাজে কর্মে পুরো বিপরীত।

হারাণের সব অপকর্ম শুভদা নীরবে সহ্য করে যায়।কখনো কোন প্রতিবাদ করে না।অধিকাংশ সময় তার না খেয়েই কাটে।হারাণ যখন বাড়ি ফিরে না তখন সেও না খেয়ে দিন রাত পার করে।হারাণের এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই মাঝে মধ্যে একটু দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বভাবে তার পরিবর্তন নেই।

শুভদার ভিতরের সুপ্ত কষ্টগুলো সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও ললনার চোখে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ে।মায়ের কষ্ট,যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না সে।তাই যেমন করেই হোক সহায়তা করার চেষ্টা করে।

তাদের এই কষ্টের দিনে এগিয়ে আসে সদানন্দ।লোকে তাকে সদা পাগলা বলে ডাকে।সাদা মনের মানুষ সে।সবার বিপদে এগিয়ে যায়।ললনার প্রতি তার একটা মায়া ছিল বলেই হয়তো এই পরিবারের প্রতি তার বিশেষ টান রয়েছে।

 

হঠাৎ একটা সময় শুভদার এই কষ্টের সংসার আরো করুণ আকার ধারণ করে।হারাণের অধিকাংশ সময় খোঁজ খবর থাকে না,সদানন্দও তার পিসিমাকে নিয়ে কাশিতে চলে যায়,যাওয়ার আগে কিছু টাকা দিয়ে গেলেও তা ফুরিয়ে অনাহারে কাটাতে হয় তাদের,মাধবের শরীরটা দিনদিন খারাপ হতে থাকে। এদিকে ছলনারও আর কয়েকমাস গেলে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে।এসবের যন্ত্রণায় শুভদা ভেঙে পড়ে।মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ললনা একদিন ভোরের আলো না ফুটতেই গঙ্গার জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।শুভদার এই কষ্টের সংসারের পরিণতিটা তখন কোনদিকে মোড় নিয়েছিল জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি।




#_উপন্যাস__চলচ্চিত্র

এই উপন্যাসের আলোকে ১৯৮৬ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আনোয়ারা, অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, জিনাত সহ অনেকে।উপন্যাস আর চলচ্চিত্রের কাহিনীর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে।

 

#শুভদা_চলচ্চিত্র

শুভদা হল ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। বাঙালি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শুভদা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আনোয়ারা, অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন গোলাম মুস্তাফা, রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ ও জিনাত।

 

#কাহিনী_সংক্ষেপ_সম্পাদনা

হারানের দুই মেয়ে। একজনের নাম ললনা, যে বিয়ের একমাসের মাথায় বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। আরেক মেয়ে ছলনা, যে খুবই চঞ্চল। হারানের কোমলমতি স্ত্রী শুভদা, অসুস্থ ছেলে মাধব আর এক বিধবা বোনকে নিয়ে তার সংসার। জুয়া আর গাঁজার প্রতি আসক্তি থাকার কারণে অভাব তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী। সদানন্দ একজন আধপাগল কর্মঠ মানুষ। সে হয়তো ললনাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। সদানন্দ যথাসম্ভব ললনার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। এদিকে বিয়ের আগে ললনার সাথে প্রেম ছিল সারদার। কিন্তু সমাজ ও তার লোভী বাবার রক্তচক্ষুর ভয়ে সে বিধবা ললনাকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করে। ললনা সারদাকে অনুরোধ করে, সে যেন তার ছোট বোন ছলনাকে বিয়ে করে। একদিন ললনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীর জলে ললনার কাপড় পেয়ে সবাই ধরে নেয় ললনা নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাক্রমে নদীতে ভাসতে ভাসতে ললনা আশ্রয় পায় এক জমিদারের কাছে। জমিদার তাকে নিজের সাথে কলকাতা নিয়ে যায়। এদিকে ললনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সদানন্দ তার সম্পত্তি বিক্রি করে সারদার সাথে ছলনার বিয়ে দেয়। জমিদারের নির্দেশে ললনা তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য শুভদার কাছে ৫০০ টাকা পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাধব মারা গেছে। শুভদার কলকাতায় কোন আত্মীয় নেই। তারপরও সেখান থেকে ৫০০ টাকা পেয়ে সে টাকাগুলো না নিয়ে সদানন্দকে কলকাতায় পাঠায় টাকার মালিকের খোঁজ নিতে। সদানন্দ কলকাতা গিয়ে জানতে পারে ললনা বেঁচে আছে। ললনা লোভে পড়ে জমিদারের রক্ষিতা হয়ে গেছে এই ভুল বোঝে সে ভারাক্রান্ত মনে ললনার সাথে দেখা না করেই চলে আসে। বাড়িতে ফিরে সে শুভদাকে সব খুলে বলে। তারপর অনাথ সদানন্দ শুভদাকে "মা" বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। যেন অনাথ সদানন্দ ফিরে পায় তার মাকে আর শুভদা ফিরে পায় তার মৃত পুত্রকে।



আমাদের সাথে যুক্ত হোন:

১। Group: https://www.facebook.com/groups/1333582920365246/?ref=share

। পেইজ: https://www.facebook.com/bookfestival2020/)

৩। ইমেইল: info.bookfestival@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০৪

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০১

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০২