স্ফূলিঙ্গ - গল্পের পেছনের গল্প


 

আপনি যদি বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে যান তবে অবধারিত ভাবে যার প্রসঙ্গ আসবে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবিঠাকুর এমন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যাকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি বাংলা সাহিত্যে।
বাংলা সাহিত্যের আরেকজন সফল লেখক এবং একজন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। বলা যায় রবিঠাকুর এবং সত্যজিৎ রায় দুজনেই অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন। দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও একটা মজার ঘটনা আছে। আজ সে বিষয়েই জানাবো।




রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ৬০, সত্যজিতের তখন জন্ম হয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের প্রথম দেখা হয় শান্তিনিকেতনে। সত্যজিতের মা সুপ্রভা রায় ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে। তখন সত্যজিতের বয়স ১০ বছর। সত্যজিৎ রায় একটা খাতা নিয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুরের অটোগ্রাফ নেবেন বলে। কিন্তু রবি ঠাকুর খাতায় সই না করে খাতাটা নিজের সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান। এতে খুব কষ্ট পান ছোট্ট সত্যজিৎ। পরদিন আবার ঠাকুরের দেখা পেতে সত্যজিৎ রবি ঠাকুরের উত্তরায়ণের বাড়িতে যান। সেখানে যেতেই রবি ঠাকুর খাতাটি ফেরত দেন সত্যজিৎকে। সেই খাতার মধ্যে লেখা ছিল সেই বিখ্যাত কবিতা---
পরদিন সকালবেলা সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথের উত্তরায়ণে গিয়ে হাজির হলে ফেরত পান খাতা। সে-খাতার ভেতর লেখা ছিল আট লাইনের একটি কবিতা---
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
এই কবিতাটি কবির মৃত্যুর পরে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে "স্ফূলিঙ্গ " নামক কাব্য সংকলণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমরা প্রায় সবাই হয়তো এই কবিতাটি পড়েছি। এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ে সারমর্মের জন্য এর বেশ কদর আছে। কিন্তু এর পেছনের মজার ঘটনা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০৪

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০১

মুক্তিযুদ্ধের বই - ০২