হাঙর নদী গ্রেনেড - বই ও সিনেমা
হাঙর নদী গ্রেনেড বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একটি বাংলা
ভাষার উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
যুদ্ধের সময়কালের যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের এক মায়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে সেলিনা
হোসেন এই উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৭২ সালে গল্পাকারে ঘটনাটি লিখেন এবং সমকালীন
টেরেডাকটিল নামে তরুণদের একটি পত্রিকায় গল্পটি ছাপা হয়েছিল। পরে তিনি ১৯৭৪ সালে
গল্পটিকে উপন্যাস আকারে লিখেন এবং ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে এ উপন্যাস
অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম হাঙর নদী গ্রেনেড নামে একটি
চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন।
কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা
হলদিগাঁ গ্রামের এক দুরন্ত কিশোরী বুড়ি। কৈশোর থেকে সে চঞ্চলতায় উচ্ছল, কৌতূহলপ্রবণ, উৎসুক দৃষ্টি, নিবিড়ভাবে দেখা,
চমৎকারভাবে মেশা, উচ্ছলতায় ভরপুর। কম বয়সেই বিয়ে হয় তার থেকে বয়সে অনেক
বড় বিপত্নীক গফুরের সঙ্গে। গফুরের সংসারে তার আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সলীম ও
কলীম নামে দুটো ছেলে আছে। সংসারজীবন ভালই লাগে বুড়ির। যদিও গফুর বুঝতে পারে না
বুড়িকে। আগের বউ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন,
কখন কী
বলে, কী করে তা বুঝা তার পক্ষে
কষ্টসাধ্য। অবশ্য কারও সাথে পাছে নেই,
কাউকে
মন্দ বলে না, কেউ বললে ভ্রুক্ষেপ করে না।
এরই মধ্যে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে বুড়ির। সলীম-কলীম থাকলেও তার নিজের
গর্ভের সন্তান চায়। অবশেষে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী
রইস। তাতেও ভালোবাসা কমতি হয় না।
কিছুদিন পর গফুর মারা যায়। সলীমের বিয়ে হয় রামিজার সাথে। বছর ঘুরতে না
ঘুরতেই তার কোলজুড়ে আসে একটি সন্তান। কলীমের বিয়ের কথার সময় শুরু হয়
মুক্তিযুদ্ধ। বন্ধ হয়ে যায় সব আলোচনা। যুদ্ধের ঢেউ আসে হলদিগাঁয়ে। সেই ঢেউয়ে
উথালপাথাল হয়ে যায় বুড়ির সাজানো সংসার। সলীম যায় যুদ্ধে। ভাই সলীম ও
মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে খবর না দেওয়ায় কলীমকে পাকিস্তানি আর্মি ও তার দোসররা
বুড়ির চোখের সামনে নির্মমভাবে খুন করে। যা দেখে বুড়ি বলে: ‘কলীম, তোর ঘাড়টা ঝুলে পড়েছে কেন? তুই একবার আমার দিকে চোখ তুলে তাকা। সাহসী বারুদ জ্বালা, দৃষ্টি ছড়িয়ে দে হলদীগাঁয়ের বুকে। মুছে যাক মহামারী, বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ। হলদীগাঁয়ের মাটি নতুন পলিমাটিতে ভরে উঠুক।’
কিন্তু পলি ভরার আগে হলদিগাঁয়ের মাটিতে রচিত হয় মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। যে দৃশ্যের রচনাকার একজন মা। বুড়ি যার নাম। হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। পাকসেনারাও বাড়িতে আসে। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় একজন মা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে তার নিজের সন্তানকে তুলে দেয় পাকসেনাদের বন্দুকের নলের মুখে। সন্তানের নাম রইস। মায়ের নাম বুড়ি। যার প্রতীতি এ রকম: ‘ওরা এখন হাজার হাজার কলীমের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওরা হলদীগাঁর স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে লড়ছে। ওরা আচমকা ফেটে যাওয়া শিমুলের উজ্জ্বল ধবধবে তুলো। বুড়ি এখন ইচ্ছে করলেই শুধু রইসের মা হতে পারে না। বুড়ি এখন শুধু রইসের একলার মা নয়।’ হাঙর নদী গ্রেনেড তখন মহাকাব্যের আখ্যান হয়ে ওঠে। বুড়ি হয়ে যায় ইতিহাস-কন্যা।
#চলচ্চিত্র
হাঙর নদী গ্রেনেড ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। সেলিনা হোসেন এর উপন্যাস হাঙর নদী গ্রেনেড অবলম্বনে নির্মিত
এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম।
ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুচরিতা, সোহেল রানা, অরুনা বিশ্বাস, অন্তরা, ইমরান, দোদুল ও আশিক প্রমুখ।
কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা
গ্রামের দুরন্ত কিশোরী বুড়ির অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার থেকে দ্বিগুণ বয়স্ক
গফুরের সাথে। গফুরের আগের ঘরের দুই সন্তান,
সলিম আর
কলিম। দুজনকেই বুড়ি ভালোবাসে। তাও সে তার নিজের সন্তান চায়। জন্ম হয় তার নিজের
সন্তান রইসের। কিন্তু অনেক সাধনার সন্তান রইস হয় বাক-প্রতিবন্ধী। ইতিমধ্যে গফুর
মারা যায়। বড় ছেলে সলিমের বিয়ে হয়। ঘরে আসে নতুন বউ রমিজা। শুরু হয় যুদ্ধ।
সলিম চলে যায় যুদ্ধে। বাড়িতে রেখে যায় কলিমকে মায়ের দেখাশুনার জন্য।
পাকিস্তানীদের দোসরদের কাছে এই খবর পেয়ে মেজর কলিমকে ধরে নিয়ে যায় এবং
মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেওয়ার জন্য কলিমকে মারধোর করে। এক পর্যায়ে তারা কলিমকে তার
মায়ের সামনে গুলি করে হত্যা করে।
যুদ্ধ আরও ভয়াবহরূপ ধারণ করে। রমিজার বাবা রমিজাকে নিয়ে যায়। গ্রামের রমজান
আলীর দুই ছেলে যুদ্ধে গেছে যেনে ক্যাম্পে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। এক রাতে
অপারেশন চালিয়ে কোণঠাসা হয়ে দুই যোদ্ধা তার বুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তাদের
পিছে ধাওয়া করে পাকিস্তানী বাহিনী তার বাড়িতে পৌঁছে। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায়
একজন মা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে তার
নিজের আকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে তুলে দেয় পাক বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে।
আমাদের
সাথে যুক্ত হোন:
১। Group:
https://www.facebook.com/groups/1333582920365246/?ref=share
২। পেইজ: https://www.facebook.com/bookfestival2020/)
৩। ইমেইল: info.bookfestival@gmail.com
Comments
Post a Comment