Posts

Showing posts from October, 2020

স্ফূলিঙ্গ - গল্পের পেছনের গল্প

Image
  আপনি যদি বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে যান তবে অবধারিত ভাবে যার প্রসঙ্গ আসবে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবিঠাকুর এমন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যাকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি বাংলা সাহিত্যে। বাংলা সাহিত্যের আরেকজন সফল লেখক এবং একজন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। বলা যায় রবিঠাকুর এবং সত্যজিৎ রায় দুজনেই অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন। দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও একটা মজার ঘটনা আছে। আজ সে বিষয়েই জানাবো। রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ৬০, সত্যজিতের তখন জন্ম হয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের প্রথম দেখা হয় শান্তিনিকেতনে। সত্যজিতের মা সুপ্রভা রায় ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে। তখন সত্যজিতের বয়স ১০ বছর। সত্যজিৎ রায় একটা খাতা নিয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুরের অটোগ্রাফ নেবেন বলে। কিন্তু রবি ঠাকুর খাতায় সই না করে খাতাটা নিজের সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান। এতে খুব কষ্ট পান ছোট্ট সত্যজিৎ। পরদিন আবার ঠাকুরের দেখা পেতে সত্যজিৎ রবি ঠাকুরের উত্তরায়ণের বাড়িতে যান। সেখানে যেতেই রবি ঠাকুর খাতাটি ফেরত দেন সত্যজিৎকে। সেই খাতার মধ্যে লেখা ছিল সেই বিখ্যাত কবিতা--- পরদিন সকালবেলা সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথের উত্তরায়ণে গিয়

মৃত্যুক্ষুধা - গল্পের পেছনের গল্প

Image
  বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পরে আর যে মনীষী ব্যক্তিটি তাঁর নিজস্ব প্রতিভার আলোকে সাহিত্যাকাশ আলোকিত করে গেছেন তিনি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবি হিসেবে আমাদের কাছে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলেও বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মূলত কবি হিসেবে আমাদের কাছে তিনি সমাদৃত হলেও তাঁর কালজয়ী কিছু উপন্যসাও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুক্ষুধা অন্যতম। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসকে নজরুল সাহিত্যের অন্যতম সেরা কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই উপন্যাসের রচনার পেছনে রয়েছে লেখকের বাস্তব জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী উপন্যাস 'মৃত্যুক্ষুধা'। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি কৃষ্ণনগরে বাস করতেন। এ নগরের চাঁদসড়কের ধারে বিরাট কম্পাউন্ডওয়ালা একতলা বাংলোয় থাকতেন তিনি। উপন্যাসের পটভূমি উক্ত বাড়ি, রোমান কাথলিক পাড়া এবং কলতলার পারিপাশ্বিক ঘটনা এবং সময়কে কেন্দ্র করে রচিত। কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট এবং দুঃসাধ্য কৃচ্ছ্রসাধন ছিল নজরুলের নিত্য জীবনযাত্রার অঙ্গ। দারিদ্রের চিত্র, সাম্য ও বিপল্গবীচেতনা এ উপন্যাসের রূপকল

ওঙ্কার - গল্পের পেছনের গল্প

Image
  গল্পের পেছনের গল্প (পর্ব -১) সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের তারুণ্যের বই উৎসব প্রতিযোগিতার নতুন আয়োজন গল্পের পেছনের গল্পতে। এই আয়োজনের নাম " গল্পের পেছনের গল্প " হলেও আমরা এই আয়োজনে শুধু গল্প নয়, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস, নাটক, কবিতা ইত্যাদির পেছনের মজার ঘটনা সম্পর্কে জানবো । আমাদের আজকের পর্বে আমরা জানবো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার কালজয়ী উপন্যাস " ওঙ্কার " এর রচনার পেছনের মজার ঘটনা নিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যতো কথাসাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে বিশেষত বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে এসেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী, স্বমহিমায় উজ্জল এবং বিরল প্রতিভাবান সাহিত্যিক হলেন আহমদ ছফা। আহমদ ছফা ছিলেন সময়ের সবচেয়ে সাহসী পুরুষ। সেটা ব্যক্তি হিসেবে এবং সাহিত্যিক হিসেবেও। তাই তাঁর মৃত্যুর এতোবছর পরেও আজকের তরুণ সমাজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে চলে ব্যাপক আলোচনা। আহমদ ছফা ছিলেন যেমন তেজস্বী তেমনি একগুঁয়ে। হুমায়ুনের ভাষায় একটা গল্প শুনি- ''আনিস সাবেতের বোনের বিয়ে হবে কুমিল্লায়। ছফা ভাইকে নিয়ে আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলাম। রাত আটটার

শুভদা - বই ও সিনেমা

Image
  ' শুভদা ' অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস।এটি তিনি বাল্যকালে রচনা করেছিলেন।কিন্তু উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে। কারণ ' শুভদা ' উপন্যাসের প্রভাব তার প্রথম বয়সের লেখা ' অন্নপূর্ণার মন্দির ' এর উপর পরে। ' অন্নপূর্ণার মন্দির ' প্রকাশিত হলে শরৎ চন্দ্র পড়ে দেখেন যে ' শুভদা ' উপন্যাসের প্রভাব এতে যথেষ্ট রয়েছে।তাই এটা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।   # কাহিনী _ সংক্ষেপ   সহজ সরল কোমল একটা চরিত্র শুভদা।গ্রামে এমন কেউ নেই যে তাকে পছন্দ করে না। সংসারে রয়েছে অত্যাচারী স্বামী হারাণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় , দুই কন্যা সন্তান ললনা ও ছলনা এক পুত্র সন্তান মাধন ও বড় ননদিনী রাসমণি। কষ্টের সংসার শুভদার।কখনো ভালো যেত কিন্তু অধিকাংশ সময়টা কষ্টের মধ্যেই যেত। হারাণ মানুষটা মোটেও সুবিধার নয়।মানসিক অশান্তিতে রেখেছে পুরো পরিবারকে।নেশা করার অভ্যেসতো রয়েছেই সাথে আরো কিছু বদ অভ্যাস ছিল।দুদিন , তিনদিন কখনো বা পাঁচ/ছয়দিনও তিনি বাড়ি ফিরতেন না।তখন উপবাস করেই কাটাতে হয় সবাইকে।এমনি করে কী আর দিন চলে!তবুও লল

লালসালু - বই ও সিনেমা

Image
  লালসালু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত একটি উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী সৃষ্টি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই উপন্যাসের জন্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।   এর পটভূমি ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ হলেও এর প্রভাব বা বিস্তার কালোত্তীর্ণ । মূলত গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৪৮ সাল। এটি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস। এটি পরে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।   লালসালু প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে ঢাকার কমরেড পাবলিশার্স থেকে।১৯৬০ সালে কথাবিতান প্রকাশনী বের করে দ্বিতীয় সংস্করণ। পরে নওরোজ কিতাবিস্তান ২০০৬-এ এবং অ্যাডর্ন পাবলিকেশন ২০১২ সালে এটি প্রকাশ করেছে।   ১৯৬০ সালে লালসালুর উর্দু অনুবাদ করাচি থেকে প্রকাশিত হয় Lal Shalu নামে। অনুবাদক ছিলেন কলিমুল্লাহ।   ১৯৬১ সালে লালসালুর ফরাসী অনুবাদ L Arbre sans racines প্রকাশ করে প্যারিসের Editions du Seuil প্রকাশনী। অনুবাদ করেছিলেন ওয়ালীউল্লাহর সহধর্মিণী অ্যান-মারি-থি

পদ্মা নদীর মাঝি - বই ও সিনেমা

Image
  পদ্মানদীর মাঝি ঔপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পঠিত , আলোচিত ও একাধিক বিদেশী ভাষায় অনূদিত জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। প্রকাশকালের আনুমানিক হিসাবে পুতুলনাচের ইতিকথাকে তৃতীয় উপন্যাস ধরলে পদ্মানদীর মাঝি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের চতুর্থ উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৩৪ সাল থেকে পূর্বাশা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে এবং ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পরে ভারতীয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হওয়ার গৌরব লাভ করে এই উপন্যাসটি। ভারতের একাধিক প্রাদেশিক ভাষাসহ ইংরেজি , চেক , হাঙ্গেরিয়ান , রুশ , লিথুয়ানিয়ান , নরওয়েজিয়ান ও সুইডিশ ভাষায় এই উপন্যাসের অনুবাদ প্রকশিত হয়। # ইতিহাস সম্পাদনা উপন্যাসটি কলকাতা থেকে সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা মাসিক পত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১ থেকে শ্রাবণ ১৩৪২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নয় কিস্তি ছাপার পর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর পর ১৯৩৬-এর মে মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। পূর্বাশা পত্রিকায় ছাপার সময় দেবীগঞ্জ ও আমিনবাড়ির এই দুটি স্থানের নাম ছিল যথাক্রমে গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী।   হীরেন